ইঞ্জিনিয়ার রকির স্বপ্ন এখন শিকলবন্দী

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খদকালনা গ্রামের যুবক বেলায়েত আহাম্মেদ রকি। ২০১২ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।
এরপর রাজশাহীতে ভর্তি হন ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। বেশ ভালোভাবেই শেষ করেন ৪ বছর মেয়াদী ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স।
হঠাৎ পড়াশোনার শেষ প্রান্তে ২০১৭ সালে খবর আসে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন রকি। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে ঠিকানা হয় বাড়িতেই। এরপর রকির চলাফেরায় পরিবর্তন দেখতে পান পরিবারের লোকজন। এর মাঝে বেশ কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান রকি। পরে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে তাকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
রকির মা বিলকিস বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছোট থেকেই শান্ত স্বভাব আর মেধাবী ছাত্র ছিল রকি। গ্রামবাসীর কাছে খুব প্রিয় ছিল ছেলেটা আমার। সবাই অনেক আদর করত। পড়াশোনাও করল রাজশাহীতে, ইঞ্জিনিয়ার হলো। কিন্তু হঠাৎ তার এমন আচরণ বদলে দিল জীবন। কোথা থেকে যে কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। রকিকে ছেড়ে দিয়ে রাখলে অন্যের ক্ষতি করে, গাছপালা কেটে ফেলে। ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট করে। মাঝেমধ্যে ছোট বাচ্চাদের দেখলেই মারধর করে। এমন অস্বাভাবিক আচরণের জন্য বাধ্য হয়েই তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।
অশ্রুসিক্ত নয়নে রকির মা আরও বলেন, মানুষ গরু-ছাগল দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমি এমনই এক হতভাগা মা, যে সন্তানকে আমি নিজেই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। মাঝেমধ্যেই ওর চিন্তায় ঘুমাতে পারি না। দিনের পর দিন নিজের সন্তানকে এভাবে মৃত্যুর মুখে যেতে দেখতে কোন মায়ের ভালো লাগে।
কাজের সুবাদে রকির বাবা থাকেন বিদেশে। তিন ভাইয়ের মধ্যে রকিই প্রথম। রকির বাবা কোনোভাবেই মানতে নারাজ রকি অস্বাভাবিক। সাধ্যের মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু তেমন কোনো ফল হয়নি।
রকির মা বলেন, আমার সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য সরকার এবং সমাজের সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন রকির মা।
সমাজসেবা অধিদপ্তর রকির পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ জন্য পরিবারটিকে লিখিত আবেদনের পরামশ দিয়েছেন নওগাঁ অফিসের উপ-পরিচালক নূরু মোহাম্মদ।